কোরবানির ঈদের আনন্দে অন্যান্য খাবারের সাথে কোরবানির গোসত আমাদের বেশি বেশি খেতে ইচ্ছা করবে এটাই স্বাভাবিক। গোস্ততো অবশ্যই খাব, কিন্তু খাবারের বিষয়ে আমাদের থাকতে হবে পরিমিত জ্ঞান, পালন করতে হবে সংযম এবং হতে হবে স্বাস্থ্য সচেতন। দুই একদিন বেশি গোসত খেতে যদিও বাধা নেই, তবুও খেতে হবে পরিমান মত। গরু, মহিষ, খাসি, ভেড়া প্রভৃতি স্তন্যপায়ী পশুর মাংসকে রেড মিট বা লাল মাংস বলে। লাল মাংসে উপকার রয়েছে। রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য ঝুঁকিও। লাল মাংস প্রোটিনের সমৃদ্ধ উৎস। আবার এগুলোতে সম্পৃক্ত চর্বি (স্যাচুরেটেড ফ্যাট) থাকে উচ্চ মাত্রায়। থাকে প্রচুর এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরলও।
সমস্যা হলো যারা অনেক দিন যাবৎ বিভিন্ন রোগে ভূগছেন তাদের যেমন- যাদের পেটের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি এবং লিভারের রোগ আছে কিংবা এসব রোগের প্রাথমিক লক্ষণ আছে।
বর্ধনশীল বাচ্চাদের জন্য মাংসের উপকারিতা: মাংসের অনেক উপকারী দিকও আছে। বর্ধনশীল বাচ্চা বা টিএনএজারদের সমর্থ ও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে মাংসের তুলনা নেই। শুধু শারীরিক বর্ধন নয়, বুদ্ধি-বৃত্তিক গঠন এবং রক্ত বর্ধনেও ভূমিকা রাখে।
আমাদের কি পরিমাণ লাল মাংস খাওয়া উচিৎ? যাদের বয়স কম এবং শারীরিক কোনো সমস্যা নেই, তারা নিজের পছন্দমতো সব খাবারই খেতে পারেন এবং তাদের হজমেও কোনো সমস্যা হয় না, তবে অতিরিক্ত না খাওয়া ভাল। অনেকেই একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণ তৈলাক্ত বা চর্বিযুক্ত খাবার খেয়ে হজম করতে পারেন না। তা ছাড়া কোরবানির মাংস পরিমাণে একটু বেশি খাওয়ার ফলে পেট ফাঁপা, জ্বালাপোড়া করা, ব্যথা করা, বারবার পায়খানা হতে পারে। পর্যাপ্ত পানি পান না করার কারণে অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্যে হতে পারে। যদিও সাধারণভাবে কোনো নির্দিষ্ট খাবার খেতে কোনো নিষেধ নেই, কিন্তু অবশ্যই নিয়ম মেনে খাওয়া উচিৎ।
যথা সম্ভব চর্বি এড়িয়ে চলা উচিৎ: যে কোনো পশুর চর্বি খাওয়া এমনিতেই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কোরবানির সময় এ বিষয়টি বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। যতটুকু সম্ভব মাংসের চর্বি ছাড়িয়ে খাওয়া ভালো। মাংসের সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণে সবজি খাওয়া যেতে পারে। টাটকা সবজি পাকস্থলীকে ভাল রাখে।
কোমল পানীয়, ড্রিংকস, ফ্রুট জুস না খাওয়া: ঈদের দিনে এখন, কোমল পানীয়, ড্রিংকস, ফ্রুট জুস ইত্যাদি খাওয়া প্রথা হয়ে দাড়িয়েছে। কোমল পানীয় বর্তমানে যত বেশি জনপ্রিয়, তত বেশি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বাজারে দেশি-বিদেশি যে সকল ফ্রুট জুস যা পাওয়া যায়, সেগুলোর বেশির ভাগই আসল ফলের রস নয়। কৃত্রিম রং ও সুগন্ধি দিয়ে জুস নামের এসব পানীয় তৈরি করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে এসব জুস পান করলে শিশুদের তো বটেই, বড়দের পাকস্থলীরও মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। সেই সঙ্গে লিভার ও কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বাজারের ফ্রুট জুস পান করলে কোনো উপকার তো হবেই না, বরং স্বাস্থ্যগত ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অতএব এসব না খেয়ে সব সময় মৌসুমি ফল খাওয়া উচিৎ।
মাংস খেয়েও ভালো থাকতে হলে যেসব উপায় অবশ্যই মেনে চলা উচিৎ:
- যথাসম্ভব লাল মাংস (গরু, মহিষ, খাসি, ভেড়া প্রভৃতি স্তন্যপায়ী পশুর মাংস) কম খাওয়া।
- কোরবানির পর মাংস মাংস কাটার সময় দৃশ্যমান চর্বি আলাদা করে ফেলে দিন।
- রান্নার সময় মাংসের গায়ে লেগে থাকা জমাট চর্বি বিশেষ পদ্ধতিতে মাংস সেদ্ধ করে ঝরিয়ে নিতে পারেন।
- বেশি বেশি আঁশ বা ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। সালাদ, ফল, ইসুবগুলের ভুসি, নানারকম সবজি—এগুলো হলো উচ্চ আঁশের উৎস। এসব খাবার চর্বি হজমে বাধা দেয় এবং কোষ্ঠ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এতে লাল মাংসের ক্ষতিকর টক্সিন অন্ত্র থেকে সরে যায়, এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরলও দূর হয়।
- টানা কয়েক দিন লাল মাংস না খেয়ে বিরতি দিন। মাঝেমধ্যে সবজি বা মাছ খান।
- প্রচুর পানি পান করুন। খাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা পর পানি পান করুন।
- যাঁরা আলসার, কোষ্ঠকাঠিন্য, এনালফিশার ও পাইলসজাতীয় রোগে ভুগছেন, তাঁরা বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করুন। মাংস অল্প পরিমাণ খান। প্রতিদিন প্রচুর পানি, শরবত বা ফলের রস, ইসুবগুলের ভুসি ও আঁশযুক্ত খাবার খান।
- যাঁরা কিডনির সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের প্রোটিন-জাতীয় খাদ্য কম খেতে বলা হয়। তাই লাল মাংস খাবার ব্যাপারে আরও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কোনো ক্রমেই অতিরিক্ত মাংস খাওয়া ঠিক হবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সারা বছরের মতো ঈদের সময়ও একই খাবার খাওয়াই উচিৎ।
[প্রিয় পাঠক, আপনি যদি হেলথকেয়ার প্রফেশনাল হন তাহলে স্বাস্থ্যসেবা.কম এ লিখতে পারেন। রোগ লক্ষন ও প্রতিকার, ওষুধ, খাবারের গুনাগুন ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত লাইফস্টাইল নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ছবিসহ মেইল করুন- write@shasthoseba.com -এ ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।]