ছোট শিশুদের দন্তক্ষয় প্রতিরোধে করণীয়

অনেক বাচ্চারই দেখা যায় তাদের উপরের চোয়ালের সামনের দিকের চারটি দাত ক্ষয় হয়ে কালো হয়ে গেছে, কোন কোন ক্ষেত্রে তা ভেঙ্গে গেছে। এই অবস্থার জন্য দায়ী বিশেষ এক ধরনের দন্তক্ষয়, যার নাম Nursing Bottle Caries.

কখন হয়?

সাধারণত জন্মের পর এক বছরের মধ্যেই বাচ্চার সামনের দিকের দাত উঠে। ঐ বয়স থেকেই এটা হতে পারে। সাধারনত ২-৫ বছরের বাচ্চাদের এটা দেখা যায়।

কাদের হয়?

যে সকল বাচ্চা বটল ফিড করে বা ফিডারে খায় এবং রাতে ঘুমের মধ্যে যে সকল বাচ্চার ফিডারে খাওয়ার অভ্যাস আছে, তাদের এটা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। অনেক সময় যে সব বাচ্চা ঘুমের মধ্যে বুকের দুধ খায়, তাদেরও এটা হতে পারে।

কেন হয়?

রাতে ঘুমের মধ্যে ফিডারে খেলে দুধের একটা আস্তরন সামনের উপরের চারটা দাতের বাইরের দিকে পড়ে। দীর্ঘসময় এটা থাকলে স্ট্রেপটোকক্কাস নামক ব্যাক্টেরিয়া গ্রুপ এটা ভেঙে এসিড তৈরি করে যা দন্তক্ষয় করে। এছাড়া অনেক সময় ফিডারে দুধের সাথে চিনি, সিরাপ ইত্যাদি মিশিয়ে বাচ্চাকে খাওয়ান, অনেকে বাচ্চাদের মুখের চুষনিতে (Pacifier) মিষ্টি জাতীয় কিছু লাগিয়ে দেন যা এই ধরণের দন্তক্ষয় বা ডেন্টাল ক্যারিস কে আরো ত্বরান্বিত করে।

লক্ষণ:

  • বাচ্চার বয়স ১.৫-৬ বছর।
  • উপরের চোয়ালের সামনের চারটা দাত আক্রান্ত হয়।
  • বাচ্চার রাতে ঘুমের মধ্যে খাওয়ার(ফিডার বা বুকের দুধ) অভ্যাস থাকে।
  • এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে উপরের চোয়ালের সামনের দাতের বাইরের দিকে বাদামী বা কালো দাগ দেখা যায়।
  • বাচ্চা যদি কাত হয়ে ঘুমানোয় অভ্যস্ত হয়,তবে যে দিকে কাত হয়ে ঘুমায় সেদিকের পিছনের দাতগুলোতেও এই বিশেষ দন্তক্ষয়ের শুরু হয়।

প্রতিকার:

এই অবস্থায় ক্ষয়ের পরিমাণ কম হলে ফিলিং করলেই হয়। যদি ক্ষয় অনেক গভীর হয় তবে পালপেকটমি (বাচ্চাদের বিশেষ রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট) অথবা এক্সট্রাকশন (দাত ফেলা) করা যেতে পারে। আর যদি ক্ষয় হতে হতে দাতটি ভেঙে যায় সেক্ষেত্রে এক্সট্রাকশন হল একমাত্র চিকিৎসা| তাই লক্ষণ দেখার সাথে সাথে ডেন্টাল সার্জনের শরণাপন্ন হোন।

প্রতিরোধ:

প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। তাই কিছু বিষয়ে একটু খেয়াল করে মেনে চললে এই সমস্যা হতে সহজেই নিষ্কৃতি পাওয়া যায়।

  • বাচ্চার মুখে প্রথম দাত আসার সাথে সাথেই নিয়মিত সকালে ও রাতে ব্রাশ করানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।প্রথম দিকে টুথপেস্ট ছাড়াই শুধু ব্রাশ ব্যবহার করুন।
  • ফিডারে খাওয়ানো যথাসম্ভব পরিহার করুন।চামচ দিয়ে খাওয়াতে পারেন।
  • রাতে ঘুমের মধ্যে খাওয়ানো পরিহার করুন।
  • বাচ্চার খাবারে বা চুষনিতে চিনি, সিরাপ বা মধু মিশিয়ে দেয়া হতে বিরত থাকুন।
  • প্রতিবার ফিডারে খাওয়ানোর পরে বাচ্চাকে পানি খেতে দিন, যাতে দাতের উপর থেকে দুধের আস্তরন ধুয়ে যেতে পারে।
  • রাতে খাওয়ানোর পর পানি খাওয়ানোর সাথে সাথে পরিষ্কার ভেজা নরম কাপড় দিয়ে দাত এবং মাড়ি ভালকরে মুছে দিন।
  • পরিষ্কার আঙ্গুল দিয়ে মাঝে মাঝে বাচ্চার মাড়ি আলতো ম্যাসেজ করে দিন।
  • প্রতি ছয়মাসে অন্তত একবার ডেন্টাল সার্জনের কাছে আপনার বাচ্চার মুখ ও দাতের নিয়মিত চেক আপের জন্য নিয়ে যান।

লেখক: ডা: কামরুল হাসান (রিয়াদ), সিনিয়র লেকচারার, কনজারভেটিভ ডেন্টিষ্ট্রি এন্ড এন্ডোডন্টিক্স, পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজ, ঢাকা

[প্রিয় পাঠক, আপনি যদি হেলথকেয়ার প্রফেশনাল হন তাহলে স্বাস্থ্যসেবা.কম এ লিখতে পারেন। রোগ লক্ষন ও প্রতিকার, ওষুধ, খাবারের গুনাগুন ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত লাইফস্টাইল নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ছবিসহ ই-মেইল করুন- write@shasthoseba.com -এ ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।]

ইউটিউব সাবস্ক্রাইব করুন  

Related posts