খোশ আমাদেদ মাহে রমজান। মাহে রমজান হচ্ছে মুসলিমদের সবচেয়ে পবিত্র একটি মাস । সিয়াম সাধনার মাস রমজান। এটি খাবার-দাবার এবং সকল পাপ থেকে বিরত থাকার মাস। এটি মুসলমানদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। ভোর রাতে সাহ্রির মাধ্যমে রোজা শুরু হয় আর সন্ধ্যার ইফতারিতে শেষ হয়। ইফতারির সময়টা রোজাদারের জন্য বেশ আনন্দের। এছাড়াও রোজাদারের জন্য আরও অনেক উপহার রয়েছে। প্রচন্ড গরমে প্রায় ১৪-১৫ ঘণ্টা রোজা রেখে শরীর সতেজ রাখা বেশ কষ্টকর হয়ে পড়ে।
এবার কিছু টিপস জেনে নিই, যেগুলো দীর্ঘ সময় রোজা রাখতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে।
সাহ্রি
যেকোনো খাবার অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়। মানবদেহের জ্বালানি হচ্ছে খাদ্য। শরীরে খাবারের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে চাহিদা রয়েছে, এর অতিরিক্ত খেলেই নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। সাহ্রির মাধ্যমে রোজাদারের দিন শুরু হয়। অনেকের ধারণা সাহরিতে পেটভরে খেলে সারা দিনে আর ক্ষুধা লাগবে না। এজন্য অনেকে সাহরিতে প্রচুর পরিমাণে খাবার খেয়ে থাকেন। এছাড়া পানির জগ অথবা বোতল হাতে বসে থাকেন এবং সেহরির সময় শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত পানি খেতেই থাকেন।
এগুলো ভুলেও করা উচিত না। এতে শরীরে একধরনের অস্বস্তির সৃষ্টি হবে, যার ফলে সারা দিন কষ্টে কাটবে। সময় শেষ হওয়ার কমপক্ষে ১৫-২০ মিনিট আগে সাহ্রি খাওয়া শেষ করতে হবে। সাহ্রিতে স্বাভাবিক খাবার খেতে হবে। পরিমাণ মতো ভাত সঙ্গে মাছ বা মাংস, ডাল, সবজি, সালাদ নেবেন এবং শেষে এক কাপ দুধ বা দই আর একটু মিষ্টি ফল নিতে পারেন। সাহ্রিতে একটু দুধ বা দই খেলে শরীরে ধীরে ধীরে শক্তি পাবেন, যা সারা দিন বেশ সতেজ রাখতে সাহায্য করবে। সাহরিতে সেদ্ধ মোটা চালের ভাত খেতে পারেন। এতে সারা দিনের না খেয়ে থাকার পক্ষে বেশ সহায়ক হবে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করলে শরীর প্রয়োজনীয় খাবার নিয়ে বাকিটা চর্বি হিসেবে জমা করে। ফলে, শরীরের ওজন বেড়ে যাবে এবং নানা রকম শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হবে।
ইফতার
রমজানে ইফতার হচ্ছে রোজাদারের জন্য অনেক আনন্দের একটি মুহূর্ত। ইফতারের ১ ঘণ্টা আগে থেকেই ইফতারের প্রস্তুতি চলতে থাকে, এজন্য সারা দিনের ক্লান্তি ইফতারের ১ ঘণ্টা আগেই উধাও হয়ে যায়। ইফতারিতে সবাই যার যার সাধ্যমতো আয়োজন করেন। সারা দিন যেহেতু না খেয়ে থাকতে হয়, সেক্ষেত্রে ইফতারিটা অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত হওয়া জরুরি। সারা দিন রোজা রাখার পর অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলে অ্যাসিডিটিসহ নানান সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। বাড়ির সকল সদস্যের কথা বিবেচনা করে ইফতারের আয়োজন করা উচিত। ছোটদের জন্য পুষ্টি জাতীয় খাবার বেশি রাখতে হবে এবং বয়স্কদের শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে তাঁদের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার রাখতে হবে । কারো হৃদ্রোগ থাকলে, তার জন্য তেল বা চর্বিযুক্ত খাবার রাখা যাবে না। বাসায় ডায়াবেটিসের রোগী থাকলে তাঁর জন্যও আয়োজনটা ভিন্ন হতে হবে। এভাবে বুঝেশুনে সবার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবারের আয়োজন করতে হবে।
ইফতারিতে পানির চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। এজন্য এমন কিছু পানীয় রাখা উচিত যেগুলো পিপাসা মেটানোর পাশাপাশি শরীরে শক্তি জোগাতে সাহায্য করবে। তাই শরবত হিসেবে অল্প চিনিযুক্ত লেবুপানি, মিষ্টি ফলের রস, ডাবের পানি, মিল্কসেক, লাচ্চি এগুলো ইফতারির তালিকায় রাখতে পারেন।
খেজুর ইফতারি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি একটি উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন ফল। ইফতারিতে খেজুরসহ অন্যান্য ফল বেশি করে রাখুন। বাজারে বর্তমানে অনেক ধরনের ফল পাওয়া যায়, যা দামেও মোটামুটি সস্তা। পেয়ারা, আপেল, নাশপাতি, তরমুজ এগুলো বেশি করে ইফতারির মেনুতে রাখুন।
হালিম হচ্ছে ইফতারির একটা অপরিহার্য উপাদান। ইফতারিতে হালিম খেলে সারা দিনের ক্লান্ত পেশিগুলো সতেজতা ফিরে পায়। এছাড়াও হালিমের পরির্বতে একটু স্যুপও খেতে পারেন।
রোজার মাসের জন্য একটা নমুনা তালিকা দেওয়া হলো। সবার জন্য এটা না-ও হতে পারে। তবে এটা বেশির ভাগ মানুষের জন্যই বেশ উপযোগী।
ইফতার
পানীয়
চিনি ছাড়া লেবু পানির শরবত।
চিনি ছাড়া এক গ্লাস তরমুজের জুস।
একটা মাল্টা/একটা কমলার রস।
চিনি ছাড়া বেলের শরবত।
ডাবের পানি।
ফল: খেজুর ২-৩টা সঙ্গে ১টা আপেল বা কলা রাখতে পারেন। অন্যান্য ফল থাকলে সবগুলো এক টুকরা করে নেবেন। যেমন এক টুকরা আনারস, তরমুজ, আম, আঙুর, কমলা, কাঁঠাল ইত্যাদি। শসা, ক্ষীরা, পেয়ারা এগুলো বেশি করে খেতে পারবেন।
অন্যান্য খাবার: বুট ভুনা ১ কাপ সঙ্গে ১-২ কাপ মুড়ি সাথে হালিম যদি থাকে তাহলে ১-২ কাপ। তেলে ভাজা খাবার ইফতারে না খাওয়াই ভালো। সারা দিন রোজা রেখে তেলে ভাজা খাবার খেলে শরীর খারাপ হতে পারে। ওজন বেড়ে যেতে পারে, রক্তচাপ বাড়তে পারে। চিনাবুট, হালিম ও ডালের তৈরি খাবারগুলো কিডনি রোগীদের জটিলতা বাড়িয়ে দিতে পারে।
অথবা
এক কাপ দুধ/টক দই , ২ কাপ ভেজানো চিড়া, , ১টা কলা।
অথবা
২-৩ কাপ ভাত/২-৩টি রুটি সাথে মাছ/মাংস ১ পিস, সবজি, সালাদ।
রাতের খাবার
তারাবির নামাজ পরে খাবেন। এ খাবার হবে অন্যান্য সময়ের সকালের নাশতার মতো পরিমাণে কম। রুটি/ভাত, মাছ বা মাংস (ঝোল কম), শাকসবজি, সালাদ।
সাহ্রি
এ খাবার হবে অন্যান্য সময়ের দুপুরের খাবারের মতো। এ সময় পূর্ণ আহার করবেন। ভাত-রুটির সঙ্গে মাছ বা মাংস (ঝোল কম), শাকসবজি, ডাল, সালাদ। দুধও খেতে পারেন।
এই রমজানে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খান, সুস্থ থাকুন।
[প্রিয় পাঠক, আপনি যদি হেলথকেয়ার প্রফেশনাল হন তাহলে স্বাস্থ্যসেবা.কম এ লিখতে পারেন। রোগ লক্ষন ও প্রতিকার, ওষুধ, খাবারের গুনাগুন ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত লাইফস্টাইল নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ছবিসহ ই-মেইল করুন- write@shasthoseba.com -এ ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।]