মধু শরীরের জন্য বেশ উপকারী। মানুষের মধুর প্রতি আসক্তি কেবল খাওয়ার জন্য নয়। এর অসাধারণ ঔষধি গুণ আছে বলেই হাজার বছর ধরে মধু পথ্য হিসেবে সমাদৃত। নিয়মিত মধু সেবন করলে অসংখ্য রোগব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। মধু তাপ ও শক্তির ভালো উৎস। এটি তাপ ও শক্তি জুগিয়ে শরীরকে সবল রাখে। পুষ্টিগুণ ও উপাদেয়তার দিক থেকে মধু শরীরের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
মধুর উপাদান
মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান থাকে। ফুলের পরাগের মধুতে থাকে ২৫ থেকে ৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ, ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ, ০.৫ থেকে ৩.০ শতাংশ সুক্রোজ এবং ৫-১২ শতাংশ মন্টোজ। আরো থাকে ২২ শতাংশ অ্যামাইনো এসিড, ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ এবং ১১ ভাগ এনজাইম। এতে চর্বি ও প্রোটিন নেই। ১০০ গ্রাম মধুতে থাকে ২৮৮ ক্যালরি। মধুর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬, আয়োডিন, জিংক ও কপার সহ অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান যা আমাদের শুধুমাত্র দেহের বাহ্যিক দিকের জন্যই নয়, দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সুরক্ষায় কাজ করে।
মধুর দশ স্বাস্থ্য উপকারিতা:
সর্দি-কাশি দূর করতে
নিয়মিত মধু সেবন করলে শরীরে বিশেষ কিছু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সর্দি-কাশি থেকে মুক্ত রাখে। সর্দি-কাশি সারিয়ে তুলতে মধু বেশ কার্যকর। নিয়মিত মধু সেবন করলে ঘুম ভালো হয়।
ফুসফুসের রোগ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে
ফুসফুসের যাবতীয় রোগে মধু বেশ উপকারী। একজন অ্যাজমা (শ্বাসকষ্ট) রোগী যদি নাকের কাছে মধু ধরে শ্বাস টেনে নেয়, তাহলে সে স্বাভাবিক এবং গভীরভাবে শ্বাস নিতে পারবে। অনেকে মনে করে থাকে, এক বছরের পুরোনো মধু শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য বেশ উপকারি।
ব্যাকটেরিয়া নিরোধী
মধু বানানোর প্রক্রিয়ায় মৌমাছি একটা এনজাইম যুক্ত করে। এটি হাইড্রোজেন পার অক্সাইড তৈরি করে। এজন্য মধু সব সময়ই ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক – নিরোধী।
আয়ুর্বেদিক মহৌষধ
দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে, ওজন কমাতে, পুরুষত্বহীনতা সারিয়ে তুলতে, প্রস্রাবে সংক্রমণ সারাতে, হাঁপানি দূর করতেও মধুকে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এতে মধু অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে
ফ্রুকটোজ আর গ্লুকোজের পরিমাণ ঠিক থাকলে রক্তে শর্করার পরিমাণ এবং ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। মধুতে শর্করা থাকলেও তা সাদা চিনি বা কৃত্রিম চিনির মতো নয়। মধু রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে পারে।
রক্ত পরিষ্কার করে
প্রতিদিন এক গ্লাস গরম পানির সাথে এক বা দুই চামচ মধু ও এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পেট খালি করার পূর্বে খাবেন। এটি রক্ত এবং রক্তনালি পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
ক্যানসার ও হৃদ্রোগ প্রতিরোধে
মধুতে ফ্ল্যাভোনোয়েড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। এটি ক্যানসার ও হৃদ্রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। নিয়মিত মধু খেলে ক্যানসার ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমে যায়।
ত্বকের জন্য উপকারি
মধু যে শরীরের জন্য খুবই উপকারী, তা আমরা প্রায় প্রত্যেকেই জানি। কিন্তু এটা হয়তো অনেকেরই জানা নেই যে, মধু ত্বকের পক্ষেও খুবই উপকারী। মধুর ব্যাকটেরিয়া নিরোধী গুণের কারণে অনেকে সৌন্দর্য চর্চায় মধু ব্যবহার করেন। অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে মিশিয়ে ত্বকের যত্নে এটা ব্যবহার করা হয়। সমপরিমাণ মধু ও লেবুর রস খুবই জনপ্রিয় ফেসপ্যাক। ত্বকের মসৃণতা বৃদ্ধির জন্যও মধু ব্যবহৃত হয়।
জখম ও ক্ষতে কাজ করে
কাটাছেঁড়ার জখম কিংবা ত্বকে পুড়ে যাওয়া সারাতে মধু ব্যবহার করা হয়। মধুতে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক নিরোধী গুণ থাকায় বাহ্যিকভাবেও এটা ব্যবহার করা যায়।
কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে
মধুতে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স রয়েছে । এটি ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয়। ভোরবেলা ১ চা–চামচ খাঁটি মধু পান করলে কোষ্ঠবদ্ধতা এবং অম্লত্ব দূর হয়।
[প্রিয় পাঠক, আপনি যদি হেলথকেয়ার প্রফেশনাল হন তাহলে স্বাস্থ্যসেবা.কম এ লিখতে পারেন। রোগ লক্ষন ও প্রতিকার, ওষুধ, খাবারের গুনাগুন ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত লাইফস্টাইল নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ছবিসহ ই-মেইল করুন- write@shasthoseba.com -এ ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।]