দাঁত শরীরের অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মতোই অপরিহার্য। মানুয়ের জীবদ্দশায় দুইবার দাতঁ ওঠে। প্রথমবার যখন দাঁত ওঠে তাকে দুধের দাঁত বা ডেসিডুয়াস দাতঁ বলে। এর পর দুধের দাঁত পড়ে গিয়ে সেখানে পারমানেন্ট বা স্থায়ী দাঁত আসে। শিশুর ছয় মাস বয়স থেকে দুধের দাঁত ওঠা শুরু হয় এবং ছয় বছর বয়স পযন্ত স্থায়ী হয়। দুধের দাঁত সর্বমোট ২০টি। দুধের দাঁত অনেক সময় বয়সের আগেই নষ্ট হয়ে পড়ে যেতে পারে। এ দাঁত সম্পর্কে আমাদের দেশের বাবা-মায়ের ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত। সেটি হচ্ছে, দুধের দাঁত তো স্থায়ী নয়। এটি এক সময় পড়েই যাবে। তাই এ দাঁতে কোনো গর্ত হলে তা ফিলিং বা অন্যান্য চিকিৎসা না করিয়ে ফেলে দেন। আর যখনই দুধের দাঁত পড়ে যাওয়ার বয়স হয়, তার অনেক আগেই তা ফেলে দিলেন তো আপনি সর্বনাশ করলেন। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুয়ের দাঁতের যেভাবে যত্ন নিতে হয়, দুধের দাঁতও ঠিক সেভাবেই যত্ন নিতে হয়, দুধের দাঁতও ঠিক সেভাবেই যত্ন নেওয়া উচিত। বরং এ দাঁতের ব্যাপারে আরও বেশি যত্নবান হওয়া উচিত। বাচ্চাদের ঘুমের মাঝে খাওয়ার অভ্যাস বা খেতে খেতে ঘুমানোর অভ্যাস থেকে দাঁতে ক্যাভিটি বা ক্যারিস তৈরি হয়। অনেক বাচ্চাই ঘুমের মাঝে মায়ের বুকের দুধ পান করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে। ল্যাকটোবেসিলাস এবং স্ট্রেপটোবক্বাস মিউট্যানস নামক ব্যাকেটেরিয়াগুলো দাঁতের ক্যাভিটি বা ডেন্টাল ক্যারিস তৈরির জন্য প্রাথমিকভাবে দায়ী। মিষ্টি জাতীয় খাবার, দুধ ও এ জাতীয় কোনো খাদ্য যদি দাঁতের গায়ে দীর্ঘক্ষণ লেগে থাকে তাহলে সেখানে ব্যাকটেরিয়া নিঃসরনে উপযুক্ত মিডিয়া বা মাধ্যম তেরি করে, যা ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়ার ল্যাকটিক এসিড তেরি করে দাঁতের ওপরের আবরণ এনামেলকে ক্ষয় করে ফেলে এবং দাঁতে গর্তের সৃষ্টি হয়। বাচ্চাদের খুব কমন একটি দাঁতের রোগের নাম ‘নাসিং বোটল সিনড্রোম’ বা আর্লি চাইল্ডহুড ক্যারিস। এ ক্ষেত্রে বাচ্চার সামনের দাঁতগুলোয় গর্ত হয়ে যায়। অনেক সময় গর্ত বড় হতে হতে দাঁতের ভেতরের নার্ভ যাকে পাল্প বলে সেখানে ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন শুরু হযে বাচ্চার দাঁতের তীব্র ব্যথার সৃষ্টি হয়। তখন দাঁতগুলোর সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন্। ক্যাভিটি বা গর্ত যদি ছোট হয়ে থাকে তাহলে দাঁতগুলো ফিলিং করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জিআই বা গ্লাস আয়নোমার ফিলিং নামে একটি ফ্লুরাইড নিঃসরণ ক্ষমতাসম্পন্ন ফিলিং ম্যাটেরিয়াল দিয়ে ফিলিং করা হয়। ফ্লুরাইডের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এটা দাঁতের ক্যারিস তৈরি হওয়া থেকে বিরত রাখে। তবে যদি গর্ত অনেক বেশি হয় তখন পালপোটমি বা পালপেকটমি ( বড়দের রুট ক্যানাল চিকিংসার মতো ) চিকিংসা করে সেই দুধের দাঁতকে রক্ষা করা হয় স্বাভাবিক বয়সে পড়ে যাওয়া পর্যন্ত। কোনো দুধের দাঁত যখন পড়ে যাওয়ার বয়স, তার অনেক আগেই যদি পড়ে যায় কিংবা অনেক দেরিতে পড়ে , তখন সেই দুধের দাঁতের করেসপন্ডিং পারমানেন্ট দাঁত যখন উঠবে তখন আঁকাঁবাকাভাবে উঠবে। পরিণতিতে আঁকাঁবাকা, উঁচু-নিচু, দাঁতের মাঝে ফাঁকা এসব ম্যালঅক্লুশন তৈরি হয়। আর এই আঁকাঁবাকা দাঁত থেকে প্রিভেনশনের একটাই উপায়, দুধের দাঁত পরে যাওয়ার বয়স পর্যন্ত রক্ষা করা, অনেক আগেই ফেলে না দেওয়া। বাবা-মায়ের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, বাচ্চাকে রাতে খাওয়ানোর পর কুলকুচা করে মুক পরিষ্কার রাখে। যদি বাচ্চা খেতে খেতে ঘুমিয়ে পড়ে তাহলে কোনো ভেজা কাপড় দিয়ে দাঁতগুলো পরিষ্কার করে দেওয়া। বছরে ২ বার বাচ্চাকে নিকটস্থ ডেন্টিষ্টকে দিয়ে চেকআপ করালে বাচ্চার ভবিষ্যৎ দাঁতগুলো হবে সুন্দর ও সুস্থ।
লেখক: ডা: কামরুল হাসান (রিয়াদ), সিনিয়র লেকচারার, কনজারভেটিভ ডেন্টিষ্ট্রি এন্ড এন্ডোডন্টিক্স, পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজ, ঢাকা
[প্রিয় পাঠক, আপনি যদি হেলথকেয়ার প্রফেশনাল হন তাহলে স্বাস্থ্যসেবা.কম এ লিখতে পারেন। রোগ লক্ষন ও প্রতিকার, ওষুধ, খাবারের গুনাগুন ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত লাইফস্টাইল নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ছবিসহ ই-মেইল করুন- write@shasthoseba.com -এ ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।]